রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
আবির আকাশ- লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
লক্ষীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু তাহেরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কর্মকর্তাদের কাছে শিখিয়ে দেয়া প্রশংসা বাক্য না বলায়, মিথ্যা সাক্ষী না দেয়ায় ও ফেসবুক গ্রুপ মেসেঞ্জারে একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেজাউল করিম রাজিবের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কুৎসা রটানোর খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডাক্তার আবু তাহের কমলনগর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।
হাসপাতালের সৌন্দর্য বর্ধন গাছ বিক্রি করে দেয়া, সরকারি গাড়ি তার গ্রামের বাড়ি ফেনীতে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, হাসপাতাল উন্নয়নের নামে স্থানীয়দের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর নামে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন, অসহায় দরিদ্র রোগীদের কাছ হতে পেয়িং বেড সিস্টেম চালু করে টাকা আদায়, ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও টাকা আদায়, রশিদবিহীন টাকা আদায়, অভিযানের নামে বিভিন্ন ল্যাব প্যাথলজি ক্লিনিকের থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় ও স্থানীয় দালাল চক্র পোষা সহ নানা অনিয়মের ফিরিস্তি নিয়ে বিভিন্ন ভুক্তভোগী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সচিব, মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী, উপ-পরিচালক শৃঙ্খলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী ওজেলা সিভিল সার্জন বরাবরই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে নোয়াখালী সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এসব তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে ইউএইচএফপিওর শিখিয়ে দেয়া মিথ্যা প্রশংসা বাক্য না বলায়, সুনাম না করায়, মিথ্যা সাক্ষী না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। পরবর্তীতে চিকিৎসকদের বার্তা আদান প্রদানের মেসেঞ্জার গ্রুপে একটা কমেন্টকে কেন্দ্র করে ইউএইচএফপিও ও সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রাজিবের সাথে তিক্ততা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে ইউএসএফপিও ডাক্তার আবু তাহের মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রাজিবকে রিমুভ করে দেন।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আমিনুল ইসলাম মঞ্জু, এমওডিসি ডাক্তার একরাম, ইমারজেন্সি ইনচার্জ ডাক্তার সোহেল রানা, মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফজলুল হক ও মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রাজিবসহ পাঁচজন মিলে মঙ্গলবার রাতে ইউএইচএফপিওর সাথে দেখা করতে যান। কথা বলার এ পর্যায়ে ইউএইচএফপিও উত্তেজিত হয়ে উঠেন। আপোষ মীমাংসা হওয়ার পর ডাক্তার রাজিবকে পুনরায় গ্রুপে যুক্ত করেন। পরদিন ভোরবেলায় হঠাৎ করেই ডাক্তার আবু তাহের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে ডাক্তার রাজীবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে থাকেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম মঞ্জু সহ পাঁচজন চিকিৎসক তার সাথে দেখা করলেও ইউএইচএফপিও ডাক্তার আবু তাহের উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডাক্তার রাজিবকে একাই ঘায়েল করার হীন চেষ্টা চালান। তিনি তার অপকর্মের ফিরিস্তি অন্যদিকে মোড় ঘুরানোর জন্যই অসুস্থ বলে হাসপাতালে শুয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগে আবু তাহের কোথাও ফিজিক্যালি অ্যাসোল্ড বা শারীরিক নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেননি তবে তিনি পেনিক এটাক বা মানসিক চাপের কথা উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন ইউএইচএফপিও ডাক্তার আবু তাহেরের কাছে আমরা পাঁচজন চিকিৎসক মিলে মেসেজ গ্রুপ থেকে সিনিয়র ডাক্তার রাজিবকে রিমুভের বিষয়ে জানতে গেছি। সে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মঞ্জু বলেন আমরা ডাক্তার আবু তাহেরের সাথে কোনো রকম অসৌজন্যমূলক আচরণ করিনি।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু তাহেরকে প্রশ্ন করলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার আহমেদ কবির বলেন এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। কোনরকম মারামারির ঘটনা ঘটেনি। তবুও তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।